দিয়াতলভ পাসের ঘটনা

সময়টি তখন ১৯৫৯
নয়জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তাদের প্রশিক্ষক সোভিয়েত ইউনিয়নের উরাল পর্বতমালার মধ্য দিয়ে একটি অভিযানে যান। এই অভিযান থেকে তারা আর বাড়ি ফেরেনি। তাদের খোঁজ করার জন্য একটি অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকারী দল নামেন। তাঁরা নিখোঁজদের ক্যাম্পসাইটটি সনাক্ত করতে পেরেছিল এবং সেখানে তাঁরা ভয়াবহ দৃশ্য সম্মুখীন হন । উদ্ধারকারীরা হাইকারদের তাঁবু পরিত্যাগ করার লক্ষন খুঁজে পান এবং তাদের বিকৃত লাশ পাহাড়ের ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খুঁজে পান। সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ, ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে অক্ষম, তাদের মৃত্যুকে একটি " কম্পাইলিং ন্যাচারাল ফোর্স " বলে দায়ী করেছে । রহস্যময় ঘটনাটি দিয়াতলভ পাস ঘটনা নামে পরিচিত হয় । হাইকারদের মৃত্যুর কারণ হিসাবে প্রচলিত আধুনিক তত্ত্বটি একটি অস্বাভাবিক তুষারপাত , যদিও রহস্যটি কখনই পুরোপুরি সমাধান করা যায়নি।

অভিযানের পটভূমি

ঘটনাটি প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের উরাল পর্বতমালার মধ্য দিয়ে একটি পরিকল্পিত ২০০ মাইল ট্র্যাক হিসাবে শুরু হয়েছিল। যাত্রা শুরু হয় ২৩ বছর বয়সী ইগর দিয়াতলভের নেতৃত্বে। অভিজ্ঞ, সু-প্রস্তুত হাইকারদের গ্রুপে উরাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিশ বছর বয়সী নয়জন ছাত্র এবং তাদের ৩৭ বছর বয়সী প্রশিক্ষক ছিল।

এই দলটি ২৩ জানুয়ারী, ১৯৫৯ তারিখে তাদের যাত্রা শুরু করে। একজন শিক্ষার্থী শরীর খারাপ হওয়ায় বাড়ি চলে যায়, কিন্তু বাকিরা তাদের শেষ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তাদের গন্তব্য ছিল খোলাত সায়াখল নামক পাহাড়ের পাশে একটি ক্যাম্প সাইট, যা এই অঞ্চলের আদিবাসীদের ভাষায় "মৃত পর্বত"।

তাদের জার্নাল অনুসারে, দলটি ১লা ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৯ তারিখে পাহাড়ে খনন করে এবং একটি তাঁবু ফেলে। এরপর তাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।

কম্পাইলিং ন্যাচারাল ফোর্স

অনুসন্ধান শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে, অনুসন্ধান দলটি তুষার থেকে হাইকারদের তাঁবুর একটি অংশ দেখতে পায়। সাইটটি খনন করার পরে, দলটি একটি বিস্ময়কর দৃশ্য আবিষ্কার করে। তাঁবু পরিত্যক্ত ছিল, যেন কোন কিছুর ভয়ে তাঁরা দ্রুত পালানোর আপাত প্রচেষ্টায় হাইকাররা ভেতর থেকে এটি কেটে ফেলেছিল। তারা তাদের সমস্ত সরবরাহ কোট, বুট, ব্যাকপ্যাক, খাবার, মানচিত্র-সবকিছু রেখে গিয়েছিল। ঘটনাস্থলে রেখে যাওয়া ডায়েরিগুলি শিক্ষার্থীদের মনের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে, তাঁরা তাদের যাত্রা সম্পর্কে আশাবাদী ছিলো এবং সম্ভাব্য বিপদের কোন উদ্বেগ প্রকাশ পাওয়া যায়নি। তাঁবু থেকে দূরে থাকা পায়ের ছাপগুলি প্রমান দেয় যে কিছু হাইকার খালি পায়ে পালিয়েছে। অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকারী দল তরুণ, বুদ্ধিমান হাইকারদের জীবিত খুঁজে পাওয়ার আশা করেছিল, কিন্তু তাদের পরিত্যক্ত ক্যাম্পসাইটের আবিষ্কার সেই আশাগুলিকে ধূলিসাৎ করে দেয়।

ক্যাম্পসাইট আবিষ্কারের পরের দিনগুলিতে, নয়জন হাইকারদের লাশগুলো পাহাড়ের ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাওয়া যায়। দুজনের পোশাক খুলে যেন কিছু একটা ছিঁড়ে দিয়েছে কিন্তু সেটা কোন প্রাণি না জড় বস্তু তা জানা যায় না। ভাঙ্গা পাঁজর, মাথার খুলি ভাঙা এবং ক্ষত সহ তিনজন ভয়ঙ্করভাবে মারা যাওয়া দেহ খুঁজে পাওয়া যায়। একজন ছাত্র তার চোখের মণি এবং তার জিহ্বা দুটোই হারিয়েছিল। কিছু দেহে তেজস্ক্রিয়তার চিহ্ন পাওয়া গেছে। যদিও হাইকারদের মধ্যে পাঁচজন হাইপোথার্মিয়ায় মারা গেছে বলে মনে হয়েছিল, তবে অন্যদের ক্ষতের কারণ এবং দলটির উন্মত্ত পালানোর পিছনে কি কারণ তা আজও একটি রহস্য রয়ে গেছে।

সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ এই মামলায় একটি ফৌজদারি তদন্ত পরিচালনা করে, তাঁরা হাইকারদের মৃত্যুর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে অক্ষম, সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছিল যে মৃত্যুগুলি " কম্পাইলিং ন্যাচারাল ফোর্স" দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। কয়েক দশক ধরে মামলাটি বন্ধ ছিল।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন