ভুতুড়ে জাহাজ মেরি সেলিস্টি

নভেম্বর ১৮৭২, ব্রিটিশ আমেরিকান জাহাজ মেরি সেলিস্টি নিউ ইয়র্ক বন্দর থেকে, ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন ব্রিগ তার স্ত্রী, তার দুই বছরের কন্যাসহ সাতজনকে নিয়ে ইতালির গিনোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
ডিসেম্বরের ৪ তারিখে আটলান্টিক মহাসাগরে জাহাজটিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় সমুদ্রে ভাসতে দেখা যায়। কি হয়েছিল জাহাজটির সাথে। ঝড়ের কবলে পড়েছিল? কিন্তু এই সময়কালে যাত্রাপথে কোন ঝড়ের কথা শুনা যায়নি। তাছাড়া যদিও ঝড়ের কবলে পড়েই থাকে, তাহলে জাহাজটি অক্ষত আছে কিভাবে? 
তাহলে কি ডাকাতি? না। তাও না।‌ কারণ ডাকাতি হলে জাহাজের সবকিছু লুট হতো। কিন্তু জাহাজের ভিতর সকল আসবাবপত্র, সম্পদ খাবার দাবার, জামা কাপড়, গোলাবারুদ সব আছে শুধু কোন মানুষ নেই।
অর্থাৎ জাহাজটি মানুষ ছাড়া একদম অক্ষত হয়ে রয়েছে। কি ঘটেছিল সেদিন? কোথায় গেল সেই মানুষগুলো?
প্রিয় পাঠক আজ আপনাদের জানাবো পৃথিবীর এক অমিমাংসিত রহস্য যার ব্যাখ্যা আজও দেয়া যায়নি।

২০ অক্টোবর ১৯৮২, ক্যাপ্টেন ব্রিগ নিউ ইয়র্কের পূর্ব নদের পায়ার ৫০ আসেন জাহাজে মাল তুলতে। ১৭০১ টি অ্যালকোহল ব্যারেল ভর্তি করে তিনি প্রস্তুতি নেন একটি দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রার। তার স্ত্রী ও কন্যা এক সপ্তাহ পর তার সাথে মিলিত হয়। তিনি নভেম্বর ৩ তারিখ যেদিন ছিল রবিবার, তাঁর মাকে চিঠি লেখেন মঙ্গলবার তাঁরা জাহাজ সমুদ্র্যে ভাসাবেন।

নভেম্বর ৫ মঙ্গলবার জাহাজটি পায়ার ৫০ ত্যাগ করে। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে ব্রিগ জাহাজটিকে স্ট্যাটেন দ্বীপে নোঙর করেন। দুইদিন পর আবহাওয়া ভালো হলে জাহাজটি পুনরায় যাত্রা শুরু করে এবং আটলান্টিক মহাসাগরে পৌঁছে যায়।

মহাসাগরে পৌঁছনোর আগে জাহাজের কানাডিয়ান ব্রিগেনটাইন ডে গ্রাশিয়া নিউ জার্সির হোবোকেন বন্দরে নেমে পড়েন। তিনি সেখানে একটি পেট্রোলিয়ামবাহি কার্গোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন যার গন্তব্য ছিল গিনো।

কার্গোটি নভেম্বর ১৫ যাত্রা শুরু করে এবং সেই পথ অনুসরণ করে যে পথ মেরি সেলিস্টি অতিক্রম করেছিল।

৪ ডিসেম্বর, ১৯৮২ সালে তাঁরা ৩৮°২০' নর্থ ১৭°১৫' সাউথ এই অবস্থানে এসে পড়ে যেটি পর্তুগালের কাছাকাছি কোথাও ছিল। তখন দুপুর ১ টা বাজে, এক নাবিক রিপোর্ট করল তাঁদের অবস্থান থেকে ৬ মাইল দূরে একটা একটি জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। ক্যাপ্টেন মোরহাউজ (কার্গোর ক্যাপ্টেন) সেদিক বরাবর জাহাজ ঘোরাতে বলেন। জাহাজটির নড়াচড়া এবং দাঁড়ানোর পজিশন ক্যাপ্টেনের কাছে অস্বাভাবিক লাগছিল এবং মনে হচ্ছিল কোন গন্ডগোল আছে। যখন তারা আরো কাছে এসে পড়ল, তারা লক্ষ্য করলো জাহাজের ডেকে কেউ নেই। ক্যাপ্টেন সিগন্যাল পাঠালেন কিন্তু কোন প্রতিত্তর নেই। তখন তিনি একটি নৌকায় সেকেন্ড মেট জন রাইট ও ডেভিয়ো নামক একজনকে পাঠালেন তদন্ত করতে। এই জুটি জাহাজের কাছে এসে বুঝতে পারলো এটা সেই মেরি সেলিস্টি। তাঁরা জাহাজের ডেকে উঠল এবং দেখল জাহাজে কোন প্রানের অস্তিত্ব নেই।
তাঁরা জাহাজে কোন অস্বাভাবিক কিছু খুঁজে পেলনা। জাহাজটি একদম অক্ষত অবস্থায় আছে। তবে কিছু ক্ষতি তাঁরা লক্ষ্য করল যা জাহাজটি পরিত্যক্ত অবস্থায় হয়েছে। জাহাজে এর যাত্রীদের সকল আসবাবপত্র, জামাকাপড়, খাবার দাবার সব কিছুই পড়ে আছে। তাঁরা কোনো আগ্নিকান্ড বা কোনো ডাকাতির ঘটনার লক্ষন তাঁরা খুঁজে পাওয়া যায়নি। জাহাজে থাকা একমাত্র লাইফ বোট নিখোঁজ। তাঁরা মনে করে এই বোটে করে যাত্রীরা পালিয়েছে। কিন্তু কেন? কিসের ভয়ে? আর লাইফ বোটে তাদের সবার জায়গা হয়েছিল?
জন রাইটরা ফিরে এসে ক্যাপ্টেনকে রিপোর্ট দেয়। ক্যাপ্টেন তাদের খোঁজার জন্য একটি গঠন করতে চাইলে তা ব্যর্থ হয়। এরপর তাদের খোঁজার জন্য অনেক কিছু করা হয় , কিন্তু কোনভাবেই তাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।

উন্নতির শীর্ষে থাকা এই যুগে এসেও এর কোন সম্ভাব্য উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুধু রয়ে গেল কিছু প্রশ্ন। উত্তর আজও মেলেনি?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন