দ্য পেকিং ম্যান: দ্য লস্ট ফসিল


সময় টা তখন ১৯২৯ সাল। কয়েকজন গবেষক দল চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে ৩০ মাইল দূরে একটি জায়গায় খনন করেছিলেন। এই খননের দ্ধারা তাঁরা এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করে ফেলেন। তাঁরা কিছু ফসিল আবিষ্কার করেন যেগুলো প্রায় ৪ লক্ষ বছরের পুরনো হবে। তাঁরা এদের নাম দেন পেকিং ম্যান।

Pekingman


তবে দুর্ভাগ্য এইযে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চীন থেকে এই গুপ্তধন হারিয়ে যায় এবং সেগুলো আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।


সময়টা তখন ১৯২৯ সাল। পেই ওয়েনঝং নামে একজন আর্কেওলজিস্ট বেইজিং থেকে ৩০ মাইল দূরের একটি লাইমস্টোনে খোঁড়াখুঁড়ি করছিলেন। জায়গাটা ফসিলের জন্য বিখ্যাত ছিল। স্থানীয়রা একে ড্রাগন বোন হিল বা ড্রাগনের হাঁড়ের পাহাড় নামে চেনে।


পেই এখানে খোঁড়াখুঁড়ি করে বেশ অদ্ভুত ধরনের কিছু ফসিল আবিষ্কার করেন। যেগুলো দেখতে একদম অন্যরকম ছিল। তিনি মনে করেন এই হাঁড়গুলো প্রাচীন মানুষের হতে পারে।


তিনি প্রথম যেই ফসিলটি পান সেটি ছিল ফাঁটা, এবং ধূলাবালি মাখা। সেই সাথে প্রায় হাফ মিলিয়ন বছর ধরে ধূলাবালি মেখে রং উঠে গেছে। কিন্তু পেই কাছে এটা অমূল্য ছিল। গুহা থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য ফসিল মিলে যেই কাঠামো তৈরি হলো সেটিকে “পেকিং ম্যান” নাম দেওয়া হলো, যেটি ছিল পৃথিবীর প্রথম এশিয়ান প্রাচীন মানব ফসিল।



এই মহামূল্যবান সম্পদ এখন কোথায়? উত্তর আমরা জানিনা। আবিষ্কার কয়েক বছরের মধ্যে শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । এবং চীন ওই যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এবং সেইসাথে এই অমূল্য রত্ন হারিয়ে যায়, যেটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য ধ্বংসের একটি।


বিজ্ঞানিরা বিগত ৮০ বছর ধরে এই ফসিল খোঁজার চেষ্টা করছেন। পৃথিবীর এমন কোন প্রান্ত নেই যে তাঁরা খুঁজতে বাদ রেখেছেন। 

সেই লাইমস্টোন যেখানে পেই এই ফসিল পেয়েছিলেন সেখানে প্রায় ৪০ টি পুরুষ, মহিলা ও বাচ্চার হাড়গোড় পাওয়া গেছে। যেগুলো একত্রে পেকিং ম্যান বলা হয়। কিন্তু সেখানে আরেকটি ফসিল পাওয়া যায় যেটি সবগুলো থেকে আলাদা।


এনাটমিকালি পেকিং ম্যানদের ছিল চওরা নাক এবং শুকনো চোয়াল। তাঁরা প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা ছিল।


বর্তমানে পেকিং ম্যানদের হোমো এরেকটাস ভাগ করা হয়েছে। যাদের মস্তিষ্ক প্রায় আমাদের মতোই। একারনেই এই ফসিলগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ।


ফসিলগুলো বেশ কিছু প্রাচীন অস্ত্রের সাথে পাওয়া গেছে যেমন কুড়াল,ছেনি, এবং হাতুড়ি। এছাড়াও সেখানে আগুন ধরানোর সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, তাই বলায় যায় তাঁরা উন্নত সভ্যতার অধিবাসী ছিলো।



আসলে আর্কেওলজি নির্ভর করে আধুনিক বিজ্ঞানের ওপর। আর পেকিং ম্যানরা বাস করত এমন এক সময় যার খবর আমাদের কাছে নেই। তাই গবেষকরা চাইলেই এগুলো নিয়ে আর গবেষণা করতে পারছে নাএই ফসিলগুলো হারিয়ে যায় ১৯৪১ সালে। এই সময় চায়নিজ ইউরোপীয়ান ও আমেরিকান প্রত্নতাত্ত্বিকগন একসাথে ওই ড্রাগন বোন হিলসে খোঁড়াখুঁড়ি করছিলেন। কিন্তু চীনা গবেষকেরা যেমন ওয়েনজং পেই ভীত ছিলেন।


তখন জাপান বিমান বাহিনী চীনের ওপর ধ্বংসলীলা চালাচ্ছিল। এই কারনেই তাঁরা ভীত ছিলেন কারণ সবসময়ই শক্তিশালী পক্ষ দুর্বলদের সম্পদ লুট করে নেয় এবং জাপানিরা ওই সম্পদ লুট করে নেবে।


তাই ফসিলগুলোকে বাঁচাতে চীনারা এগুলো লুকিয়ে ফেলে, কিন্তু তাঁরা দেখল তাদের যথেষ্ট পরিমাণে সিকিউরিটি নেই এগুলো রক্ষা করার জন্য, তাই তাঁরা ঠিক করল তাদের আমেরিকা কলিগদের অনুরোধ করবে এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমেরিকানরা রাজি হলো।


তাঁরা প্রথমে চীনের আমেরিকান অ্যাম্বাসেডর গেলো এগুলো গোপনে লাগেজে ভরে ডিপ্লোম্যাটিক ম্যাটেরিয়াল হিসেবে আমেরিকায় পাঠানোর জন্য। কিন্তু অ্যাম্বাসেডর রাজি হলো না।


তাই গবেষকরা গেলো ইউএস মিলিটারি কাছে। তাঁরা প্রথমে ওই হাড়গুলোর প্লাস্টার কাস্ট করল। এবং শেষে ১৯৪১ সালে, গবেষকরা ওই ফসিল গুলোকে প্যাকিং করে দুইটি মিলিটারি ফুটলকারে ভরতে সক্ষম হয়।


এরপর এই ফুটলকার দেওয়া হয় ইউএস মেরিন বেজে যেটি বেইজিং বাইরে ছিল। তারপর তাঁরা সেটিকে ট্রেনে করে কিনহোয়াংডোর মেরিন বেজে পাঠিয়ে দেয়। এই বেজকে ক্যাম্প হলকম্প বলা হয়।


হলকম্প ক্যাম্পে ফসিলগুলো আসে ডিসেম্বরের শুরুতে। এর পরের সোমবারে তাঁদের নিতে একটি জাহাজ আসে যার নাম ছিল “এস এস প্রেসিডেন্ট হ্যারিসন”।


কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, জাহাজটির যাত্রা শুভ হয় না। জাহাজটির যাত্রা শুরু করার কথা ছিল সোমবার ডিসেম্বরের ৮ তারিখ। জাহাজটি যখন চীনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে তখনই জাপানিরা একে আক্রমন করে ফলে জাহাজটি হলকম্প ক্যাম্প ছেঁড়ে দেয় ফসিলগুলো না নিয়েই।


এরপরের ঘটনা সব অন্ধকার। তবে ধারণা করা হয় যে জাপানিরা চীন দখল নেওয়ার পর সেই ল্যাবে পৌঁছায় যেখানে এই ফসিলগুলো সুরক্ষিত ছিল। এবং সেখানে তাঁরা কিছুই খুঁজে পায় না। তাঁরা এক ল্যাবের গবেষকদের গ্ৰেপ্তার করে এবং পাঁচদিন ধরে তাকে ফসিলের লোকেশন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে।


এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চিন ব্ল্যাকহোলে পরিনত হয়। তারপর শুরু হয় কমিউনিস্ট ও জাতীয়তাবাদীদের গৃহযুদ্ধ। ফলে এই ফসিলগুলোর কি হলো তা কেউ বলতে পারে না।


বেশ কিছু গুজব শোনা যায়, যেমন একটি গুজব এমন যে হলকম্প ক্যাম্প থেকে ওই ফুটলকার সাবধানে সরিয়ে ফেলা হয়। আরেকটি গুজব এমন জাপানি বাহিনী ওই ফসিল গুলোকে পেয়ে যায় এবং ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। 


এছাড়াও আরো শোনা যায় যে ওই ফসিলগুলো ইয়াল্টা নিয়ে যাওয়া‌ হয় রাশিয়ান জাহাজে করে। আবার এটাও শোনা যায় যে চায়নিজ ন্যাশনাল ফোর্স ফসিল গুলোকে তাইওয়ানে নিয়ে গেছে।


এক অচেনা ব্যাক্তি মিলিয়ন ডলার অফার করে যে ওই ফসিলগুলো ফিরিয়ে দেবে । যদিও সেটি ছিল একটি স্ক্যাম তারপরও FBI এবং CIA তাকে ট্র্যাক করার চেষ্টা করে।


কেউ কেউ বলেন যে হলকম্প ক্যাম্পের কেয়ারটেকাররা ফসিল গুলোকে জাপানিদের হাতে তুলে দিয়েছে। যাতে এগুলো নষ্ট হওয়ার চেয়ে ভালো থাকে।


এ সবই গুজব।


আসলে এই মহামূল্যবান ফসিলগুলোর কি হয়েছে তা আমরা কেউ জানিনা। তবে কিছু গবেষক দল প্রানপন চেষ্টা করছেন এগুলো খুঁজে পেতে। আশা সেই দিন খুব দূরে নেই যেদিন এগুলো লোকসম্মুখে হাজির হতে।

Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ