Guns of Barisal/Barisal Guns

Barisal Guns:


মিস্ট্রি বাংলার প্রথম আয়োজন বরিশাল  গানস । যেটা গানস অব বরিশাল(Guns of Barisal) নামেও পরিচিত। এর এধরনের নাম করনের কারন হচ্ছে এই অঞ্চলে এমন কিছু বিকট আওয়াজ শোনা যায় , যা অনেকটা কামানের গোলার মত । কিন্তু এই আওয়াজ কিসের তা আজোও জানা যায় না । এটি বাংলাদেশের একটি মোস্ট আন সলভ মিস্ট্রি যা আজও সমাধান হয়নি ।
বাংলাদেশের দক্ষিন অঞ্চলে অবস্থিত একটি জেলা বরিশাল , যা বর্তমানে বরিশাল বিভাগের প্রধান জেলা ।এটি  বিভাগের স্বীকৃতি পায় ১৯৯৩ সালে । যখন কার ঘটনা তখন বাংলাদেশ বলে কোন দেশ ছিলনা । তখন ব্রিটিশরা বাংলার নবাবদের পরাস্ত করে আমাদের দেশ শাসন করছে । এমন এক সময় অর্থাৎ অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে বরিশাল অঞ্চলে প্রকান্ড এক শব্দ শোনা যায় । কিসের শব্দ তা ভালভাবে উপলব্দি করা যায়না, তবে মনে হয় খুব কাছেই কেউ কামান মেরেছে । অন্তত স্থানীয়রা ওই সময় এই কথায় বলেছিল ,যেন কেউ খুব কাছে কেউ কামান মেরেছে । তবে একদিনই এই শব্দ হয়ে থেমে যায়নি । পরপর শোনা যেতে থাকে এই শব্দ , প্রথমে মনে হয় এই শব্দ সমুদ্র থেকে আসছে এবং পরে বোঝা যায় আশেপাশে কোথাও থেকে আসছে। তবে এমন কোন নির্দিষ্ট জায়গা তারা চিন্হিত করতে পারে না , যেখান থেকে এই শব্দের উৎপত্তি । ওই সময় স্থানীয়রা এঘটনায় ভীত হয়ে কি জানি কোন জ্বীন-ভূত নাকি অপদেবতার ডাক।
বরিশাল গানস প্রথম নথিতে আসে ১৮৭০ সালে । এটি শব্দ কিছুটা কামানের শব্দের মত হওয়ায় এর নাম রাখা হয় বরিশাল গানস । এটি খালি বরিশালে শোনা গেছে এমনটা নয় । ১৮৮৬ সালে কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটি তথ্য অনুযায়ী বরিশাল সহ খুলনা, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, হরিশপুর ইত্যাদি অঞ্চলে গানস অফ বরিশাল এর বিকট শব্দ শোনা গেছে। ১৮৯০ সালে টি.ডি.লাতুশ তার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে বরিশাল গানস কেবল গাঙ্গেয় দ্বীপ নয় ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপেও শোনা গেছে। মাঝে মাঝে একটি শব্দ শোনা যেতো আবার কখনো বা দুইট বা তিনটি শব্দও শোনা যেতো। শব্দগুলো বেশি শোনা যেতো দক্ষিন ও দক্ষিন-পূর্বাঞ্চল থেকে । এই শব্দ হওয়ার দিনক্ষন ছিল । এটি অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যেই কেবল শোনা যেত ।
কিন্তু কিসের শব্দ ছিল এটা?
ব্রিটিশদের ধারনা ছিল এটা কোন জলদস্যুদের কাজ , তারা এই শব্দের মাধ্যমে নিজেদের ভেতর হয়ত কোন সংকেত প্রেরন করে । কারন ওই সময় পর্তগীজ দস্যুরা এদেশে হামলা চালাতো, তবে এই শব্দ হওয়ার সময় তাদের কোন হদিস পাওয়া যায়নি । তাছাড়া যদিও তারা শব্দ ব্যবহার করে কোন সংকেত পাঠাত ,তহে সেটা এই অক্টোবার থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যেই খালি পাঠাতো কেন । অন্য মাসে কি করত? এদিকে প্রায় প্রতি বছর এই সময় শব্দটা শোনা যায়। তাহলে কিসের শব্দ এটা?
এরপরের শতক অর্থাৎ ঊনবিংশ শতকে গানস অফ বরিশাল ব্যপক তোলপার সৃষ্টি করে। পরে তারা আরো কিছু অনুমান করেছিলেন কিন্তু তার কোনটাই আজও প্রমান করা সম্ভব হয় নি।
অনেকের ধারনা ছিল ভূমিকম্প, কেউ কেউ বলত বজ্রপাত আবার কারো মতে মোহনার ঢেউয়ের আঘাত ইত্যাদি। কিন্তু এ সবগুলোই ছিলো কেবল ধারনা মাত্র। গানস অফ বরিশালের রহস্য আজও আমাদের কাছে অজানা।
এই বরিশাল গানস কেবল যে বাংলাদেশে শোনা যায় এমন না । এটি পৃথিবীর অনেক যায়গায় শোনা গেছে । মূলত এ ধরনের শব্দকে বলা হয় মিস্টপুফার্স । এটি বাংলাদেশ, জাপান , ইতালি , নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফিলিপাইন, ইরান এমনকি যুক্তরাষ্টেও । সেখানকার স্থানীয়রা বিভিন্ন নামে এগুলোকে বলে থাকে যেমন: জাপানে বলে উমিনারি(Uminari) মানে সাগরের কান্না ,ইতালি বলে ব্ররোনটিডি(Brontidi), মারিন(Marine), বালজা(Balza), লাগোনি(Lagoni) প্রভৃতি নামে ,নেদারল্যান্ড ও বেলজিয়ামে বলে মিস্টপুফার্স(Mistpoeffers), ফিলিপাইন ও ইরানে বলা হয় রিটার্মবচ(Returmbos) নামে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি সুফিয়া কামাল তার আত্মজীবনীমূলক বইতে গানস অফ বরিশালের কথা উল্লেখ করেছেন। তার ভাষ্য মতে ১৯৫০ সালের পরে এই শব্দ আর শোনা যায়নি।
এই গানস বরিশালের মিস্ট্রি আজও সমাধিত হয়নি , যদি কখনো সম্ভব হয় তবে তা মিস্ট্রি বাংলায় জানানো হবে।
আজ এ পর্যন্ত আগামি  পর্বে  আবার দেখা হবে সে পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন