হাভানা সিন্ড্রোম

২০১৬, ডিসেম্বর
একজন সিআইএ এজেন্ট হাভানায় আমেরিকান দূতাবাসে এসে রিপোর্ট করেন, তার মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথাঘোরা সহ অনেক সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু তিনি হাসপাতালে না যেয়ে কেন দূতাবাসে রিপোর্ট করলেন? এর কারণ তার এই সমস্যা শুরু এক অদ্ভুত আওয়াজ যা তিনি তার অ্যাপার্টমেন্ট শুনতে পান। আর এর থেকেই এই সমস্যার উদ্ভব। তিনি আরো দাবি করেন এই শব্দ কেবল তিনিই শুনতে পেয়েছিলেন তার সাথে থাকা অন্য কেউ এই শব্দ শুনতে পায়নি।
এতেই শেষ নয়। কয়েকদিন পর আরো দুই সিআইএ এজেন্ট একই সমস্যা নিয়ে মার্কিন দূতাবাসে রিপোর্ট করেন। এবং ২০১৮ পর্যন্ত এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬ আমেরিকান ও ১৩ কানাডিয়ান। প্রত্যেকেই একই সমস্যায় ভুগছেন এবং এর কারন সেই অদ্ভুত শব্দ।
কি ছিল সেই শব্দ কেনই এই শব্দ ভুগতাভুগি ছাড়া অন্যকেউ শুনতে পায় না?

এই অসুস্থার একটা নামকরন করা হয়েছে "হাভানা সিন্ড্রোম"


আগস্ট ২০১৭ থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করা হয় যেখানে বলা হয় যে, আমেরিকান ও কানাডিয়ান কূটনৈতিক কর্মীরা ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে অস্বাভাবিক, ব্যাখ্যাতিত স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।

মূলত কিউবার ২১ টি ঘটনাকে ফোকাস করা হয়। যেখানে অস্বাভাবিক ঝাঁঝালো একটা শব্দকে উল্লেখ করা হয়, যেটা তাদের কানে আঘাত করে। শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে ভিকটিমরা বলেন: শব্দটি একটি কম্পনের চাপ যা অনেকটা গাড়ি চালানোর সময় জানলার কাঁচ ভেঙ্গে গেলে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমনি একটা শব্দ। শব্দের স্থায়িত্ব ২০ সেকেন্ড থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত হতো বলে তারা জানান। অদ্ভুত বিষয় এইটা যে, এই শব্দ শুধুমাত্র ভিকটিমরাই শুনেছেন ‌। তাদের সাথে থাকা সঙ্গিরা কেউ নাকি কোন শব্দ শুনতে পায় নি।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘটনাকে কোন অপরিচিত ডিভাইস থেকে হওয়া শব্দকে দায়ী করেছে, যেটা তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমেরিকান দূতাবাসের অনেক কর্মীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন এক অজ্ঞাত কর্মী যার এখন হেয়ারিং এইড লাগে। আমেরিকান সরকার এর জন্য কিউবাকে দায়ি করেনা। আমেরিকান রিসার্চাররা এই শব্দকে সনিক ওয়েপন অথবা ইনফ্রাসাউন্ড হতে পারে।

এফবিআই একটি তদন্ত করে যাতে সনিক ওয়েপন শব্দ বাতিল ঘোষণা করা হয়। একটি কমিটি গঠন করা হয় যাতে সিআইএ ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট যৌথভাবে কাজ করে ছিল। তদন্তের ফলাফল তারা প্রকাশ করেনি। এমনকি অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান কাছেও না। এর কারণ হিসেবে বিভিন্ন সিকিউরিটি ইস্যুকে দায়ি করে।

কানাডিয়ান এক ইউনিভার্সিটি ভিকটিমদের বিভিন্ন টেস্ট করা হয়। যেমন এমআরআই, সিটি স্ক্যান। টেস্টের ফলাফল আমেরিকান ফলাফল সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। কানাডিয়ান সরকার এর ফলে কিউবা কূটনৈতিক কর্মীদের সরিয়ে আনে। এবং সীমিত করে দেয়।

ঘটনার পর কিউবান সরকার এর জন্য দায়ী নয় বলে দাবি করে। তারা মার্কিন সয়াহতা চায় ঘটনাকে তদন্ত করতে। তাঁরা ২০০০ বিজ্ঞানি ভাড়া করে যারা তদন্ত কর্মকর্তাদের সাথে ভিকটিমদের আশেপাশের ৩০০ প্রতিবেশীকে জিংঙ্গাসা করে, দুইটা হোটেল পরীক্ষা করে। এনবিসি জানায় কিউবিয়ান সরকার মাটি ও বাতাস পরিক্ষা করে দেখে, কোনো ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েব দায়ি কিনা পরীক্ষা করে দেখে। এবং এর পিছনে কোন পোকামাকড় দায়ি কিনা তাও যাচাই করে ,কিন্তু তারা এর দায়ি কি তা জানতে ব্যর্থ হয়। কিউবান সাইন্স একাডেমি জানায় এই রহস্যময় অসুখের কারন বিজ্ঞান সমর্থন করে না।

দিন শেষে যে কয়েকটা প্রশ্ন বিশ্বব্যাপি জানতে চায় তা হলো, কি এই শব্দ, এর উৎস কোথায়, এই শব্দ কি কোন মানব সৃষ্ট।
আমেরিকার এক গবেষণায় বলা হয়, এর হয়তো কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে যা আমরা জানিনা। কিন্তু সরকারের রহস্যময় ভূমিকা এই প্রশ্ন আরো ঘনীভূত করেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন