মিস্ট্রি অফ ড্যান কুপার

২৪ নভেম্বর, ১৯৭১
নর্থওয়েস্ট এয়ারলাইনের ফ্লাইট ৩০৫ পোর্টল্যান্ড থেকে টেক অফ করতে চলেছে গন্তব্য সিয়াটল। মাত্র ৩০ মিনিটের ফ্লাইট। যাত্রীরা সবাই অপেক্ষা করছে। একসময় টেক অফ করলো। যাত্রীদের মধ্যে একজন ছিলেন বয়স প্রায় ৪০ , কালো শ্যুট-টাই পড়া। তিনি বারবোন ও সোডার অর্ডার করলেন। যখন এয়ার হোস্টেস তাঁকে সার্ভ করতে আসলো, তখন তিনি একটি চিরকুট ধরিয়ে দিলেন। চিরকুট পড়ে তরুণী এয়ার হোস্টেস ভয়ে একদম ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তিনি চিরকুট টা পাইলটকে দেখালেন। পাইলটো একইভাবে ভয় জমে গেলেন।
চিরকুটটায় লেখা ছিল "আমার ব্রিফকেসে বোমা আছে। আমার দাবি না মানলে আমি এটা বিস্ফোরণ ঘটাবো।"

এই ব্যাক্তির নাম ছিল ড্যান কুপার (প্লেনের টিকিটেই এই নাম ছিলো) তিনি যেমন হঠাৎ করে এসেছিলেন আবার কর্পূরের মতো মিলিয়ে গেলেন এবং তার টিকির খোঁজ আজও পাওয়া যায়নি।

ঘটনার দিন এই ব্যক্তি ফ্লাইট ৩০৫ এর একটি টিকিট কেনেন ক্যাশ টাকায়। তিনি তার নাম লেখালো ড্যান কুপার।তিনি প্লেনে উঠলেন এবং ১৮-ই যেটা একদম শেষ সাড়িতে ছিল। তিনি ড্রিংক অর্ডার করলেন। তার সাথে একটা ব্রিফকেস ছিল।
ফ্লাইট যথা সময় (দুপুর ২.৫০) টেক অফ করলো। তখন তিনি একটি চিরকুট ফ্লাইট এটেনডেন্ট ফ্লোরেন্স শাপনারকে দিলেন। ফ্লোরেন্স চিরকুট না দেখে তার পার্সে ভরে ফেলল। তখন কুপার তার দিকে ঝুঁকে বলল "মিস, তোমার উচিত নোটটা খুলে দেখা কারন আমার কাছে বোমা আছে"।
ফ্লোরেন্স একটু অবাক হলো সে নোটটা খুলে দেখলো। তাতে স্পষ্ট হস্তাক্ষরে লেখা আছে:- " মিস আমার ব্রিফকেসে বোমা আছে এবং আমি চাই তুমি আমার পাশে এসে বসল"।
ফ্লোরেন্স ভয় পেল। সে কুপারের পাশে বসল, আর বোমা দেখতে চাইল। কুপার তাকে ব্রিফকেস খুলে দেখালো, ফ্লোরেন্স দেখল দুই সাড়িতে সাজানো চারটি সিলিন্ডার যা একটি ডাইনামাইট।

এরপর কুপার তার চাহিদা ফ্লোরেন্সকে বলল, সে তা লিখে নিয়ে ককপিটে আসল ক্রদের জানাতে। ক্যাপ্টেন স্কট নোটটা দেখলো এবং পরিস্থিতি বুঝতে পারলো। এরপর তিনি এয়ার লাইনস হেড কোয়ার্টারে যোগাযোগ করল এবং কুপারের ডিমান্ড জানালো। তার ডিমান্ড ছিলো দুই লক্ষ ডলার তা তাকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে দিতে হবে, দুটি ফ্রন্ট প্যারাসুট, দুটি ব্যাক প্যারাসুট।

আরেক ফ্লাইট এটেনডেন্ট টিনা মাকলো কুপারের পাশে বসে গল্প করতে থাকে, যাতে যাত্রীরা বুঝতে না পারে যে তাদের প্লেন হাইজ্যাক হয়েছে।

তখন কুপার আরেকটি ডিমান্ড করেন যে সিয়াটোলে ল্যান্ডিং করার পর তিনি যাত্রীদের বাইরে যেতে দিবেনা। যখন তাঁর চাহিদা মত সবকিছু এনে দেওয়া হবে, তখনই তিনি যাত্রীদের যেতে দেবেন।

ক্যাপ্টেন স্কট এই কথা এয়ার লাইনস কতৃপক্ষ জানালেন। কতৃপক্ষ সিয়াটোল এয়ার পোর্টে পরিস্থিতি খুলে বললে, তাঁরা পুলিশ ও এফবিআই কে জানায়। এবং তাদের এজেন্ট এয়ার পোর্ট ঘিরে ফেলে।

যথা সময়ে প্লেন এয়ার পোর্টে নামল। কিন্তু যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কেউ কোন পদক্ষেপ নিল না। ক্যাপ্টেন ঘোষণা করলেন কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এ মুহূর্তে যাত্রীদের নামাতে পারছেন না বলে তিনি দুঃখিত। তার চাহিদামত জিনিস মাকলো এনে দিলেন। এরপর কুপার যাত্রীদের যাবার অনুমতি দিল। সর্বশেষ যাত্রী নামার সাথে সাথে সে ঘোষণা করল প্লেন টেক অফ করতে। ক্যাপ্টেন উপায় নেই দেখে আদেশ পালন করলেন।

সন্ধ্যা প্রায় ৭.৪০ প্লেন‌ আবার টেক অফ করে। ফ্লাইট এটেনডেন্ট মাকলো তার পাশে বসে ছিল। ৮.০০ টার দিকে কুপার বলল ব্রিফকেস নিয়ে আপনি চলে যান। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি ব্রিফকেস নিয়ে চলে গেলেন।

কিছুক্ষণ পর তিনি প্লেনের ব্যাক পার্ট খুলে ফেলেন। এরপর সব নিশ্চুপ। যখন প্লেনের ক্রুরা পরিক্ষা করতে আসলো দেখল কুপার নেই। সে প্লেনের পিছন পাশ দিয়ে ঝাঁপ মেরেছে।

রাত ১১:০০ টার পর প্লেনটি তাহই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ড করে। এবং এফবিআই এজেন্টরা বোমা ডিফিউজ করে।

কে এই ড্যান কুপার? তার কি আর খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল? উত্তর না। তিনি প্রায় ২ লক্ষ ডলার নিয়ে একদম গায়েব হয়ে যায়। তাকে ধরার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। অনেক থিওরি আছে তার প্যারাসুট ল্যান্ডিং- এর সম্ভাব্য স্থান। প্লেন ক্রুদের সহায়তায় একটি স্কেস ও বানানো হয়েছে কিন্তু তার হদিস কোন ভাবেই পাওয়া যায়নি।

পৃথিবীর বুকে একটা অমিমাংসিত রহস্য হয়ে থাকবে ড্যান কুপার।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন