ব্রাজিলের পানির নিচে প্রাচীন রোম

গুয়ানাবারা। ব্রাজিলের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপসাগর। যেটি দক্ষিন-পূর্ব দিকে রিও ডি জেনিরোর কাছে অবস্থিত। এখানে প্রচুর পরিমাণে দূষণ ছাড়া আর কিছু ছিলো না। তবে একটি আবিষ্কার এর সবকিছুই পরিবর্তন করে দেয়। এবং জগৎ জুড়ে বিখ্যাত হয়ে উঠে।

সময়টা ছিল ১৯৭৬। একদল চিংড়ি শিকারী তাদের শিকার ধরতে সাগরে কাজ করছে। হঠাৎ তারা পানির তলায় কিছু দেখতে পেল। তাঁরা দেখল পানির ১০০ ফিট নিচে ১৫ মাইল জুড়ে প্রচুর পরিমাণে পাত্র পড়ে আছে। তাঁরা বুঝতে পারলো এগুলো সুপ্রাচীন।
তাঁরা এই খবর লোকারণ্যে প্রচার করলে তা জাতীয় পর্যায়ে চলে যায় এবং সরকার থেকে পরিক্ষা করতে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হয়।
বিশেষজ্ঞ পরিক্ষা করে দেখেন পাত্রগুলো অনেক প্রাচীন। পাত্রগুলো ছিল লম্বা, সিরামিকের তৈরি, দুই হাতল ওয়ালা, তাকে বলা হয় অ্যাম্ফোরা, এগুলো ব্যবহার করত প্রাচীন গ্ৰীক, রোমান, ফিনিশিয়ানরা । তাঁরা এগুলো ব্যবহার করত সমুদ্রে যাত্রার সময় পানি, তেল এবং মদ রাখার জন্য।
এই আবিষ্কার মনে করিয়ে ১৬ শতকের কথা, যখন পর্তুগিজ নেভিগেটর পেডরো‌ আলভেস ক্যাবরেল এই যায়গায় এসেছিলেন।

এই অস্বাভাবিক আবিষ্কার নজরকারে লেখক, আন্ডারওয়াটার আর্কেলজিস্ট এবং গুপ্তধন শিকারী রবার্ট মার্কসের। তিনি প্রথমে এই কথা বিশ্বাস করতেন না যে। কোন ইউরোপীয় প্রথমে ব্রাজিলে পদার্পন করেছে। তিনি ১৯৮২ সালে ঠিক করলেন তিনি আরো কিছু তথ্য সংগ্রহ করবেন। ওই জায়গায় পরিক্ষা চালাবেন। তিনি ব্রাজিল সরকারের অনুমতি পান। তার সঙ্গে ছিল এমআইটির প্রফেসর ড. হারোল্ড এডগার্টন। তাঁরা সুনার টেকনোলজি ব্যবহার করে জায়গাটি স্ক্যান‌ করেন। এবং ইতিহাস নাড়ানো এক আবিষ্কার করে বসেন। এবং তার বিশ্বাস কেউ নাড়িয়ে দেয়।

তাঁরা ২০০টি আ্যাম্ফোরা খুঁজে পান। যেগুলো দূষিত পানি ভর্তি ছিলো। কিছু কিছু সারফেস কাছে ও কিছু কিছু পানির গভীরে খুঁজে পান। পানির নিচের গুলো পুরো অক্ষত অবস্থায় আছে। তাঁরা বুঝতে পারে এই পাত্র সাম্প্রতিক সময়ে কেউ সাজিয়ে রাখেনি। অতি প্রাচীন কাল থেকেই এখানে পতিত রয়েছে। মার্কস মনে করেন যে এগুলো কোন প্রাচীন রোমান জাহাজ থেকে এসেছে, এবং তিনি পানির তলায় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ কাঠ খুঁজে পেয়েছিলেন বলে দাবি করেন। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে এত আগে এখানে কোন রোমানদের পর্দাপন হলো। আমাদের জ্ঞান অনুযায়ী দক্ষিণ আমেরিয়ায় প্রথম এসেছিলেন পেডরো অ্যালভেস ষোল শতকের দিকে। কিন্তু ঐ পাত্র গুলো তারো আগে তৈরি। রোমানরা সুদূর দেশ হিসেবে ভারতকে চিনত, আর ল্যাটিন আমেরিকাকে অন্য গ্ৰহের দেশ হিসেবে। আর সেই দেশেই তাঁরা সবার আগে পৌঁছল। মার্কসের এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। তিনি আরো তথ্য সংগ্ৰহ করার জন্য এখানে আবার অনুসন্ধান শুরু করেন, তিনি চেয়েছিলেন যদি অন্য কিছু যেমন মুদ্রা, পাত্র বা অস্ত্র ইত্যাদি পান কিনা।

এর মধ্যে মার্কস জারগুলো উপর বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরিক্ষা করিয়ে নেন। বিশেষজ্ঞ ছিলেন এমআইটির অ্যাম্ফোরার উপর বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ উইল। তিনি পরিক্ষা জানতে পারেন জারগুলো ২য় অথবা ৩য় শতকের রোমান নিদর্শন।

মার্কস একটি থিওরি দেন, যাতে তিনি বলেন এগুলো একটি রোমান জাহাজ থেকে এসেছে, যেই জাহাজ মানুষের নিয়ন্ত্রনে এখানে এসেছে। এবং কোন একটা কারনে এখানে ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু কেন? তা আজও অজানা।

১৯৮৩ সালে ব্রাজিল সরকার মার্কসের করা পরিবর্তি অনুরোধ নাকচ করে দেয়। এছাড়াও এই স্পটে যেকোন ধরনের অনুসন্ধান বন্ধ করে দেয়। তাঁরা মার্কসের ওপর অভিযোগ আনে, তিনি স্পট থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন চুরি করেছেন।
হতাশাগ্রস্থ মার্কস ব্রাজিল সরকারের উপর ধামাচাপা দেয়ার দায় চাপিয়ে দেন। তিনি বলেন স্পটে কিছু একটা পতিত আছে তা হয়ত ব্রাজিলের ইতিহাস বদলে দিতে পারে, এই ভয়ে সরকার কোনো অনুসন্ধান চালাতে দিচ্ছে না এবং জেলেদের বলার পরও কোন তদন্ত চালায়নি।

তাহলে প্রশ্ন থেকে গেল অনেক। কিভাবে প্রাচীন রোমান জার গুলো ব্রাজিলে আসল? তাঁরা কি জাহাজে চেপে আসলো? জাহাজ এত পথ পাড়ি দিল কিভাবে? ব্রাজিল সরকার কি সত্যিই কিছু ধামাচাপা দিচ্ছে?

উত্তর আজো অজানা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন