ঘটনার স্থান পোল্যান্ড। সময়টা ছিল ১৯৭৮। সেদিন ছিল মে মাসের ১০ তারিখ। এক চমৎকার সকালে জ্যান ওলস্কি ইমিলসিন থেকে তার গ্ৰাম ড্যাবরাওয়াতে ফিরছিলেন। দিনটি ছিল সাধারন এবং সবকিছুই রুটিন মাফিক চলছিল। কিন্তু হঠাৎ সব উলট-পালট হয়ে গেল। তার ফেরার পথে সে একটা ছোটখাটো ধুলো ঝড়ের কবলে পড়লেন। ধুলো ঝড়ের মধ্যে থেকে দুইটি অদ্ভুত দর্শন মানবায়ব প্রাণী বেড়িয়ে আসে। তাদের উচ্চতা ছিল ৫ ফিট। মুখমণ্ডল সবুজ, বড় বড় কালো চোখ, চোখের পাশ দিয়ে সাদা কাজল দিয়া। একটি অদ্ভুত স্যুট পড়া।
প্রাণী দুইটা প্রথমে তাকে দেখতে পায়নি। তাঁরা নিজেদের ভেতর কি জানি আলোচনা করছিল। একসময় তাঁরা জ্যানকে দেখতে পায়। এবং তাঁরা তাঁদের হাঁটার গতি কমিয়ে দেয়। সে তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে তখন তাঁরা অদ্ভুত ভাষায় কথা বলতে থাকে, জ্যানের বক্তব্য অনুযায়ী ভাষাটা ছিল এমন "পেটেটে পেটেটে...."
একসময় তাদের সাথে দুরত্ব একদম কমে আসে। এবার সে তাদের ভালোভাবে দেখতে পায়। তার ভাষ্যমতে:-
"আমি খেয়াল করলাম তারা অনেক খাটো, তাঁরা একই উচ্চতার ছিল এবং দেখতে চটকদার প্রকৃতির। আমি আরো লক্ষ্য করলাম তাদের হাতের আঙ্গুলে মাছের মত পাখনা ছিলো। তাদের নাকের কাছে যেখানে চুল শুরু হয়েছে, সেখানে পিণ্ডের মত অদ্ভুত কিছু একটা ছিল। আমি বস্তুটির প্রকৃতি বুঝতে পারিনি। এটি তাদের শরীরের কোন অংশ নাকি কিছু লুকিয়ে রেখেছে বুঝতে পারিনি। তাদের সারা শরীর শ্যুটে ঢাকা ছিল এমনকি কপালও"
এই অদ্ভুত দর্শন প্রাণী দেখে জ্যান তাঁর ঘোড়ার কার্ট থামিয়ে দেন। কিন্তু ওই প্রাণীগুলো তাকে চালিয়ে একটি দিকে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছিল। তিনি তাদের নির্দেশ মত এগিয়ে যান। তিনি যখন একটা নির্দিষ্ট স্থানে যান, তিনি দেখতে পান ওই প্রাণীদের সাথে একটি পালিশ করা অ্যালুমিনিয়ামের বিরাট কিছু একটার কাছে যাচ্ছেন। বস্তুটি দেখতে আয়তকার, তাঁর উপর সাদা কারুকাজ করা, এবং ব্যারেল সদৃশ্য কিছু একটা আছে। বস্তুটি যেন একটি অক্ষরেখায় ঘুরছে। তিনি দাঁড়িয়ে পড়লে তাঁরা তাকে আরো এগিয়ে যেতে বলে। এরপর কি ঘটে তার ভাষায় বর্ণনা করা হলো:-
"আমি যখন তাদের পাশ কেটে যাচ্ছিলাম, তাঁরা আমাকে থামালো। তাঁরা ইশারা করল তাঁদের সাথে যেতে, আমি যেন তাদের আদেশ মানতে বাধ্য, তাই তাদের সাথে যাচ্ছি। একসময় আমরা একটি বিরাট যানের কাছে এলাম। যান থেকে একটি ছোট্ট এলিভেটর নেমে এলো। এলিভেটর অনেক ছোট্ট, দুইজন বড় মানুষ তাতে ধরবে না। তবে আমার অদ্ভুত সঙ্গিদের জায়গা হয়ে যাবে। আমরা তাতে চেপে উপরে উঠে গেলাম।"
যখন ওলস্কি ওই যানটির ভিতরে প্রবেশ করলেন, তিনি খেয়াল করলেন এর ভিতরের সবকিছু ধুসর কালো। তিনি আরো লক্ষ্য করলেন যানটির চারপাশে ওই অদ্ভুত প্রাণীরা শুয়ে আছে। তাঁরা তাঁদের হাত পা ব্যবহার করার চেষ্টা করছে চলাফেরার জন্য, কিন্তু পারছে না। একটু ভিতরে সে আরো দুই মানবায়ব প্রাণী দেখতে পেল। তাঁরা তাকে কাছে ডাকল। এরপর ওলস্কি ভাষায়:-
"আমাকে তাঁরা ইশারা করল কাপড় খুলে ফেলতে। আমি বাধ্য হয়ে খুলতে থাকলাম। আমি অর্ধনগ্ন হয়ে লজ্জ্বায় থেমে গেলাম কিন্তু তাঁরা নির্দেশ করল সব খুলে ফেলতে। আমি তাই করলাম। এরপর আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাণীটা কোথায় যেন গেল, এবং ফিরে আসল দুই হাতে থালা সদৃশ্য কিছু নিয়ে। থালা দেখতে অদ্ভুত ছিল , সে সেই থালা দিয়ে আমার দুই হাত ছুঁয়ে দিল, এরপর দুই পা একই কাজ করল। তারপর সে আমাকে কাপড় পড়তে ইশারা করে বেড়িয়ে গেল, এবং দরজা বন্ধ করে দিল। ওই রূমে কোন আলো বা জানলা ছিল না। তাই আমি অন্ধকারে কাপড় পড়ে নিলাম।
এরপর তাদের একজন আমাকে একটা রূমে নিয়ে গেল। সেখানে আমি তাদের মত প্রাণী দেখতে পেলাম যারা কিছু খাচ্ছিল । কিন্তু খাবার খাওয়ার কোন আওয়াজ হচ্ছিলো না। প্রাণীটি আমাকে এক জায়গায় বসিয়ে কিছু খেতে দিল। কিন্তু আমি ভয়ে ছিলাম তাই কিছু খেতে চাচ্ছিলাম না। সে আমার সঙ্কোচ বুঝতে পারলো। এরপর তারা আমাকে ছেড়ে দেয়।"
সে নিচে নেমে সোজা বাসায় চলে যায় এবং ঘটনা তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে সব খুলে বলে, তাঁরা বাইরে এসে ওই অদ্ভুত যানটাকে এক ঝলক দেখতে পায়, এবং তার প্রমাণস্বরূপ আরো কিছু আলামত পায়। ওলস্কি ভাষায়:-
"আমি বাসায় দৌড়ে যায়, আমার ছেলেকে খুঁজে পায়। তাকে বলি মাঠে যাও তাহলে তুমি আকাশে অদ্ভুত এক গাড়ি দেখতে পাবে। সে গেল যাওয়ার সাথে চিৎকার করে কয়েকজন প্রতিবেশীকে নিয়ে গেল। তাদের হৈ হুল্লোড় দেখে আমিও গেলাম, কিন্তু আমরা কিছুই দেখতে পেলাম না। তবে সেই জায়গায় কিছু পার্ক করা ছিল তা দেখতে পায়। এছাড়াও এর আশপাশের অনেক ঝোপঝাড় পুড়ে গেছে। এছাড়াও আমরা চারকোনা অদ্ভুত অনেকগুলো পায়ের ছাপ খুঁজে পায়। "
এই ঘটনা রাতারাতি চড়াও হয়ে যায় এবং ওই স্পট জনপ্রিয় হয়ে উঠে। অনেকে এমনকি ওলস্কি প্রতিবেশিরাও তাকে মিথ্যাবাদী বলে। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তাকে পরিক্ষা করে তাকে সত্যবাদি ও সুস্থ মানসিকতার মানুষ হিসেবে বিবেচিত করে। এছাড়াও তার জীবন যাপন কোথাও তাকে গল্প কথক হিসেবে চিহ্নিত করা যায়নি। অনেক অপমান হেই হওয়ার পড়েও ওলস্কি তার কাহিনী থেকে নড়েনি। তার ভাষায়:-
"আপনারা জানেন এ ঘটনার পর আমার সাথে কি হয়েছে। তার আমাকে মদ্যপ ঘোরের মধ্যে থাকা মানুষ হিসেবে দেখতে থাকে। তাঁরা বলে পুরোটাই আমার স্বপ্ন ছিল। প্রতিদিন এখানে প্রায় ১৫-২০ জন ভিজিটর আসে, রিপোর্টার আসে। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে যেতাম।"
ওলস্কি ১৯৯০ সালে মারা যান। কিন্তু তার এই কাহিনী এখনো জনপ্রিয়। ঘটনাটি কোন জনপ্রিয় স্থানের নয়। তবে এই ঘটনা জায়গাটিকে বিখ্যাত হয়ে যায়। এমিলসিনে একটি মনুমেন্ট আছে ঘটনাটির। আমরা কি মনে করি এই রহস্যময় ঘটনাটির। এটা কি সত্যি নাকি কোন কাল্পনিক, বানোয়াট? উত্তর এখনো অপরিস্কার।
0 মন্তব্যসমূহ